চর্যাপদের কবিদের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

চর্যাপদ — কবিদের পরিচিতি (বিরুপা, ভাদেপা, বীণাপা ...)

চর্যাপদের কবি

নীচে বাংলা ভাষায় চর্যাপদের কয়েকজন কবি/সিদ্ধাচার্য সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর সাজানো হয়েছে — তথ্য-কেন্দ্রিক ও সংক্ষিপ্ত।

বিরুপা

সংক্ষেপে — চর্যাপদের একজন প্রাচীন কবি/সিদ্ধাচার্য

প্র : বিরুপার কখন ও কোথায় অবস্থান ছিল ?
উ : মনে করা হয় অষ্টম শতকে ত্রিপুরায়।
প্র : তার গুরু কে ছিলেন?
উ : জালন্ধরীপা।
প্র : চর্যাপদে অন্তর্ভুক্ত তার পদের সংখ্যা কয়টি ?
উ : একটি (৩ সংখ্যক)।
প্র : এই পদে কী বর্ণিত হয়েছে ?
উ : ড়িবাড়ির উপযুক্ত চিত্র। বলা হয়েছে, এক শুড়িনী দুই ঘরে ঢুকে বাকল দিয়ে মদের পাত্র বাধে।

ভাদেপা

একজন চর্যাকবি — আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় তত্ত্বচর্চায় পরিচিত

প্র: ভাদেপার কখন ও কোথায় অবস্থান ছিল ?
উ: খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে শ্রাবন্তী এলাকায়।
প্র : তার গুরু কে ?
উ : জালন্ধরীপা, মতান্তরে কাহ্নপা।
প্র : চর্যার কোন পদ তিনি রচনা করেন ?
উ : ৩৫ সংখ্যক পদ।
প্র : এই পদের মূলকথা কী ?
উ : ধর্মীয় তত্ত্বকথার বর্ণনা।
প্র : ভাদেপা রচিত পদের প্রথম দুই পঙক্তি কী ?
উ : "এতকাল হউ অচ্ছিলো স্বমোহেঁ। এবে মই বুঝিল সদগুরু বোহেঁ।"
(পদ : ৩৫) — অর্থাৎ এতকাল আমি স্বমোহে ছিলাম, এখন সদগুরু বুঝলাম।

বীণাপা

সূর্য-চন্দ্র উপমায় দারুন শিল্পব্যঞ্জনা

প্র : বীণাপার কোথায় অবস্থান ছিল?
উ: খ্রিস্টীয় নবম শতকে গৌরে।
প্র: তার গুরু ছিলেন?
উ: ভাদেপা।
প্র: সংস্কৃত বডাকিনীনিম্পন্নক্রম কার রচনা ?
উ : বীণাপার।
প্র : চর্যাপদের কোন পদটি রচনা ?
উ : ১৭ সংখ্যক।
প্র: এই পদের বিশেষত্ব কী ?
উ : এখানে সূর্য - চন্দ্রকে চমৎকার উপমায় উপস্থাপন করা হয়েছে।

ভুসুকুপা

সৈন্যবংশীয় পরিচয় ও অলসতাবর্ণনা

প্র : ভুসুকুপার সময় ও অবস্থান কোথায় ?
উ : মনে করা হয় অষ্টম থেকে এগার শতকে; ভুসুকুপা সৌরাষ্ট্রের ক্ষত্রিয় রাজপুত্র ছিলেন।
প্র : চর্যায় পদ রচনার দিক থেকে তার অবস্থান কোথায় ?
উ : দ্বিতীয়।
প্র : তিনি কয়টি পদ রচনা করেন ও কী কী ?
উ : আটটি — সংখ্যা: ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯।
প্র : ভুসুকু নামটির অর্থ কী ?
উ : ভুসুকু প্রথমে অলস ছিলেন — ভুক্তি (ভু), সুপ্তি (সু), কুটিরে (কু) অবস্থান ছাড়া কিছু করতেন না; তাই তাঁকে 'ভুসুক' বলা হত।

মহীধরপা

মগধভিত্তিক চর্যাকবি — নৈতিক ভাবার্থ কেন্দ্রীক

প্র : মহীধরপারের কখন ও কোথায় অবস্থান ?
উ : খ্রিস্টীয় নবম শতকে মগধ অঞ্চলে।
প্র : তিনি চর্যাপদের কোন পদটি রচনা করেন ?
উ : ১৬ সংখ্যক পদ।
প্র : এই পদের বক্তব্য কী ছিল ?
উ : পাপ ও পূণ্যকে দুটি শিকলের সাথে তুলনা করে তা ছিন্ন করে মহারস পান করার কথা বলা হয়েছে।

শবরপা

চর্যার প্রাচীনতম কবিদের মধ্যে একজন (আঞ্চলিক পরিচয় বিতর্কিত)

প্র : শবরপা কোন সময়ের কবি ?
উ : তার জীবনকাল ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে; সেই সূত্রে শবরপা চর্যা কবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন।
প্র : শবরপা কোন দেশের লোক ছিলেন ?
উ : মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে তিনি বাংলা দেশের লোক।
প্র : শবরপা কোন কবির শুরু ছিলেন ?
উ : লুইপার।
প্র : তিনি কার শিষ্য ছিলেন ?
উ : নাগার্জুনের।
প্র : সংস্কৃত ও অপভ্রংশ মিলে তিনি কয়টি গ্রন্থ রচনা করেন।
উ : ১৬ টি।
প্র : চর্যাপদের কোন পদগুলো তার রচনা ?
উ : ২৮ ও ৫০ সংখ্যক পদ।
প্র : এই পদগুলোতে তিনি কী বলেছেন ?
উ : এখানে কবি শূন্য, অতিশূন্য, মহাশূন্য ও প্রভাস্বর শূন্য — এই চার শূন্যের মধ্যে তৃতীয় অর্থাৎ মহাশূন্যকে উদ্যানবটিকা বলেছেন।
প্র : শবরপা রচিত দুটি উল্লেখযোগ্য পঙক্তি লেখ ।
উ : "উষ্ণা উষ্ণা পাবত তহি সবই সবরী বালী । মোরাঙ্গ পীচ্ছ পরিহাণ সরবী গীবত গুঞ্জরী মালী ।"
(পদ : ২৮) — অর্থাৎ উচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে; তার পরিধানে ময়ূরের পুচ্ছ, গলায় শুভ্রার মালা।

শান্তিপা

বৌদ্ধ ধর্মচর্চায় নিবেদিত — সিংহল ভ্রমণের ইতিহাস

প্র : শান্তিপা কোন সময়ের কবি বলে মনে করা হয় ?
উ : এগার শতকের।
প্র : তিনি কোথায় বাস করতেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে ?
উ : বিহারের বিক্রমশীলায়।
প্র : তার নামে চর্যাপদের কয়টি পদ পাওয়া গেছে ?
উ : ২ টি (১৫ ও ২৬ নং)।
প্র : বৌদ্ধধর্ম প্রচার করতে তিনি কোথায় যান ?
উ : সিংহল।

ডোম্বীপা

রাজস্তুতি ও অভিযাত্রী চরিত্র — অলৌকিক বর্ণনা

প্র : ডোম্বীপা কে ছিলেন ?
উ : তিনি ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ছিলেন; পরে বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমণ করেন; অলৌকিক ক্ষমতা ছিল বলে মনে করা হয়।
প্র : ডোম্বীপার জীবকাল উল্লেখ কর ।
উ : দীর্ঘজীবী পুরুষ — ৭৯০ থেকে ৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তাঁর জীবনকাল ছিল।
প্র : ডোম্বীপার গুরু কে ছিলেন ?
উ : বিরুপা।
প্র : ডোম্বী কোন পদ লিখেছেন ?
উ : ১৪ সংখ্যক।

সরহপা

সরল প্রেমকাহিনি ও আঞ্চলিক ভাঙন

প্র : সরহপা কোন সময়ের কবি বলে মনে করা হয় ?
উ : দশ থেকে এগার শতকের কবি।
প্র : তার নামে চর্যাপদে কোন কোন পদ পাওয়া গেছে ?
উ : ২২, ৩২, ৩৮, ৩৯ — মোট ৪ টি।
প্র : তার পদের মূল বিষয় কী ?
উ : শবর-শবরীর প্রেমকাহিনি এবং কতিপয় সরলতর কথা।

লুইপা

প্রবীণ বৌদ্ধসিদ্ধাচার্য — চর্যাপদের অন্যতম প্রভাবশালী কবি

প্র : লুইপা কে ছিলেন ?
উ : প্রবীণ বৌদ্ধসিদ্ধাচার্য ও চর্যাপদের কবি।
প্র : তিনি কোন সময় কোথায় অবস্থান করতেন ?
উ : মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অনুমান: ৭৩০ থেকে ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে লুইপা জীবিত ছিলেন।
প্র : লুইপা কোন অঞ্চলের কবি ছিলেন ?
উ : তিব্বতি ঐতিহাসিক লামা তারনাথের মতে, লুইপা পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গার ধারে বাস করতেন; হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে, লুইপা রাঢ় অঞ্চলের লোক।
প্র : চর্যাপদের প্রথম পদটি কার রচনা ?
উ : লুইপা।

তথ্যসূত্র: সংকলিত ঐতিহাসিক-বৌদ্ধচর্চা ও চর্যাপদ অবলোকন প্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত সারমর্ম।

এ পৃষ্ঠাটি প্রিন্টযোগ্য ও জল্পনাসূচক ইতিহাসকে সংক্ষিপ্তভবে উপস্থাপন করে; বিস্তারিত গবেষণার জন্য প্রাথমিক উৎস পর্যালোচনা করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url